কলকাতায় ভগৎ সিং এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু / Bhagat Singh and Netaji
১৯২৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ।
বড়দিনের আগেই কলকাতা শহরে অত্যন্ত গোপনে, ছদ্মবেশে পা রাখলেন
মহাবিপ্লবী ভগৎ সিং। ব্রিটিশ পুলিশ ঘুনাক্ষরেও টের পেল না, যাকে তারা হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে,
তিনি তখন সবার চোখের নজর এড়িয়ে লাহোর থেকে চলে এসেছেন কলকাতা শহরেই। ঘাঁটি গেড়েছেন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী সাজুরামের
বাড়িতে।
সেসময়
কলকাতায় সাজ সাজ রব। দেশের
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা কলকাতায় ভিড় জমিয়েছেন। কেন?
আসলে কলকাতায়
অনুষ্ঠিত হচ্ছিল বর্ষিয়ান নেতা মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের
৪৪তম বার্ষিক অধিবেশন। সে সময়ে অধিবেশনে সব সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলার ঘরের ছেলে, দামাল ছেলে
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রশ্ন আমাদের
কাছেও উঠে আসে যে, ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে সে সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কি
সাক্ষাৎকার ঘটেছিল? হয়েছিল কি কোন গোপন আলোচনা সভা?
কেন
এসব প্রশ্ন উঠে আসছে, তার কারণটা হলো এই যে, আপনারা জানেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা
আন্দোলন মূলত তিনটি ধারায় সংঘটিত হয়েছিল একটি ধারা হলো অহিংস আন্দোলন , অসহযোগ আন্দোলন যার রূপকার হলেন মহাত্মা গান্ধী, দ্বিতীয় ধারাটি হল ইংরেজদের বিরুদ্ধে গুপ্তবিপ্লব
ও সশস্ত্র আন্দোলন --- যার অন্যতম বিশিষ্ট মুখ ছিলেন কংগ্রেস দলের বামপন্থী নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আর তৃতীয় ধারাটি হল সম্পূর্ণ কমিউনিস্ট
ভাবধারায় সংগঠিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন, যার অন্যতম মুখ হলেন ভগৎ সিং। তা, এই শেষের দুই ধারার অন্যতম চরিত্ররা যখন কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন, ১৯২৮
সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে, তখন স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল হয় আমাদের যে, এই দুই
কেন্দ্রীয় চরিত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং ভগৎ সিং --
তাদের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাৎকার ঘটেছিল কিনা!
মূলত
এই প্রশ্নটিকেই সামনে রেখে এই ভিডিওর
উপস্থাপনা।
(ভিডিওর লিঙ্ক : https://youtu.be/C0VgOaPXyU8 )
তাছাড়া ভগৎ সিং যে বইটিকে ধর্মগ্রন্থের মত অনবরত অবলম্বন করতেন, সেই বইটি কিন্তু লিখেছিলেন বাঙালি বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ স্যান্যাল। বইটির নাম ছিল বন্দিজীবন। অন্যদিকে ভগৎ সিং যে মানুষটিকে তার জীবনের দেবতা হিসেবে বরণ করেছিলেন, সেই কর্তার সিং সরবাই, যিনি ছিলেন পাঞ্জাবের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তিনি কিন্তু বৈপ্লবিক ভাবে প্রভাবিত ছিলেন বাংলার বীরবিপ্লবী রাসবিহারী বসুর দ্বারা।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হল হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাব্লিকান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মধারা। এই কর্মধারা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল একটি হলো চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেনের কর্মধারা এবং অন্যটি হলো পাঞ্জাবের ভগৎ সিংয়ের কর্মধারা।
বলাবাহুল্য, দুটি কর্মধারাই পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত
ছিল। আর বর্ধমানের ছেলে বটুকেশ্বর দত্ত, কলকাতার ছেলে যতীন দাস এরা দুজনেই তো ছিলেন ভগৎ সিংয়ের জীবনের সাথে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ভগৎ সিংয়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য দুই অংশ। অর্থাৎ আমি
বলতে চাইছি, পাঞ্জাবের বৈপ্লবিক আন্দোলন, যে আন্দোলনের প্রধান মুখ ছিলেন ভগৎ সিং, তাঁর উপর বাংলার প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর, অত্যন্ত
তাৎপর্যপূর্ণ, সুদুরপ্রসারী।
এখন
প্রশ্ন হলো বাংলার সাথে এমন গভীর কানেকশন থাকা সত্ত্বেও ভগৎ সিং কলকাতায় বেশ
কয়েক মাস আত্মগোপন করে রইলেন কেন? কলকাতায় আত্মগোপন করেই বা তিনি কী করেছিলেন? আমি নিশ্চিত এসব প্রশ্নের উত্তর আপনারা সকলেই জানেন, কারণ ভগৎ সিং নামটি
উচ্চারণ করলেই কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের মনের মধ্যে পরপর ভেসে
ওঠে।
সময়টা ছিল সেই ১৯২৮ সাল। তারিখ ১৭ই ডিসেম্বর। ভগৎ সিংয়ের গুলিবর্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার মিস্টার সন্ডার্স, যদিও আসল লক্ষ্য তখন ছিল ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার স্কটসাহেব, যার নেতৃত্বে বেশ কয়েক দিন আগে ৩০শে অক্টোবর সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ আন্দোলন করার সময় ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর নির্মম লাঠির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবীণ নেতা পাঞ্জাব কেশরী লালা লাজপত রায়। ১৭ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ।
সেই মৃত্যুর বদলা নিতেই তো ১৭ই ডিসেম্বর ভগৎ সিংয়ের পিস্তল গর্জে উঠেছিল। টানা দু'দিন ব্রিটিশ পুলিশ চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও হত্যাকারীদের নাগাল পায়নি। ঠিক সে সময় ভগৎ সিং বিপ্লবী দুর্গাদেবীর অভাবনীয় সাহায্যের মাধ্যমে লাহোর থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় চলে আসেন। এখানেই শুরু হয় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেশ কয়েক মাসের আত্মগোপনের পর্ব।
কলকাতায় সেই আত্মগোপনের সময় ভগৎ সিং অভ্যস্ত হলেন বাঙালি পোশাকে -- পড়তেন ধুতি আর শাল। লম্বা চুল দাড়ি কেটে নিজের লুকটাও পুরো পাল্টে ফেলেছেন। নিজের নাম দিয়েছিলেন হরি, বলাবাহুল্য বি.কে. দত্তের কাছে বাংলা ভাষা শিক্ষাও শুরু করেছিলেন।
বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা বলেছেন, আত্মগোপন করে থাকলেও ভগৎ সিং কিন্তু ছদ্মবেশে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের সেই বার্ষিক অধিবেশনে। সম্ভবত সেখানেই তিনি প্রথম দেখেছিলেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের প্রবাদপ্রতিম জাতীয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে।
সুভাষচন্দ্র বসু তখন কংগ্রেস দলে অনেকটাই
কোণঠাসা। ভগৎ
সিং দেখলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামী তরুণ
কংগ্রেস নেতারা চাইছিলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলন, কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে মহাত্মা
গান্ধীর অনুগামীরা চাইছিলেন ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন বা হোমরুলের জন্য
আন্দোলন। অধিবেশনে ভোটাভুটির ফলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র
বসুর পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের প্রস্তাব ৯৭৩- ১৩৫০ ভোটে পরাস্ত হলো। অর্থাৎ ভগৎ
সিংয়ের চোখের সামনেই কংগ্রেসে তখন সুস্পষ্ট বিভাজন।
কংগ্রেসের
অধিবেশনের এই সমস্ত ঘটনা লক্ষ্য করে বেশ হতাশ হয়ে
পড়েছিলেন ভগৎ সিং। অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে তিনি সেসময় কলকাতা শহর
দেখতে বেরিয়েছিলেন। শুনলে অবাক হবেন যে, সেসময়
তিনি একটি সিনেমা হলে ছবিও দেখেছিলেন। ছবিটির নাম
ছিল আঙ্কেল টমস কেবিন। ছবিটি দেখে
তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাছাড়া, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলও দেখেছিলেন, কিন্তু মন্তব্য করেছিলেন, আগ্রার
তাজমহলের মত অত সুন্দর নয়।
তবে
কলকাতা শহরের বুকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করলেও তিনি তার রাজনৈতিক কর্মসূচিকে
নিষ্ঠার সাথে সার্থক করেছিলেন। অত্যন্ত গোপনে তিনি একে একে
দেখা করলেন অনুশীলন সমিতির নেতাদের সাথে। ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী, রবীন্দ্রমোহন সেন এবং প্রতুল
গাঙ্গুলী প্রমুখ নেতাদের সাথে মিলিত হয়ে তিনি তার নিজস্ব বৈপ্লবিক কর্মসূচি পেশ করলেন, কিন্তু তারা কোনো কোন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন না
কারণ, কংগ্রেসের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় মনোভাবের জন্যই নেতারা ছিলেন তখন
দ্বিধাগ্রস্থ।
কিন্তু ভগৎ সিং বিন্দুমাত্র হতাশ হলেন না। তার জীবনের অভিধানে হতাশা বলে কোন শব্দই
নেই। দুর্জয় এক জেদ আর অপরিসীম নিষ্ঠা – এই
ছিল তাঁর জীবনের মূল চালিকাশক্তি।
তিনি গোপনে হাজির হলেন ১৯ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রীটে, এখন যার নাম বিধান সরণি। সেখানেই আর্যসমাজের মন্দিরের বিশাল চারতলা বাড়ি। বাড়ির ওপর তলার ঘরে থাকতেন কাঁওয়াল নাথ তিওয়ারি নামে একজন কমরেড। তার সাথে দেখা করে ভগৎ সিং জানালেন তিনি দ্রুত কমরেড যতীন দাসের সঙ্গে দেখা করতে চান কারণ যতীন দাসের মত বোমা তৈরীর দক্ষতা আর কারো নেই।
কয়েকদিনের মধ্যেই আর্যসমাজ মন্দিরের সেই ঘরে যতীন দাসের সাথে গোপন বৈঠক হলো। ভগৎ সিং বোমা বানানোর প্রস্তাব দিলেন, প্রথমে যতীন দাস কিছুতেই রাজি হলেন না। যতীন দাস বলেছিলেন, পার্টির নীতি পাল্টে গ্যাছে, গুপ্ত আক্রমণের বদলে গণসংগঠন তৈরীর দিকেই নজর দিয়েছে পার্টি। লক্ষ ব্যাপক গণ আন্দোলন। ভগৎ সিং বলেছিলেন, বাংলা তৈরি আছে, কিন্তু পাঞ্জাবকে তৈরি করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে পাঞ্জাবের যুব সমাজ জেগে ওঠে। নাছোড় ভগৎ সিংয়ের প্রস্তাবে বোমা তৈরি করতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন যতীন দাস। ঠিক হলো, কলকাতায় নয়, হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের হেডকোয়ার্টার আগ্রাতে বোমা তৈরি করা হবে।
সুতোরাং, ভগৎ সিংয়ের কলকাতায় আত্মগোপন করে থাকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য শেষপর্যন্ত সফল হল। আর্যসমাজ মন্দিরের সেই দোতলার ঘরে বেশ কয়েক মাস কাটানোর পরে বিপ্লবী ভগৎ সিং কলকাতা ত্যাগ করলেন। তবে কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগে বরানগরে গিয়ে অনুশীলন সমিতির আদিপর্বের বিপ্লবীনেতা যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তথা নিরালম্ব স্বামীর সঙ্গে তিনি শেষবারের মতো দেখা করে যান।
বলাবাহুল্য, কলকাতা পর্বে কিন্তু ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর
সাক্ষাৎকারের বা গোপন বৈঠকের কোন ঘটনা, কোন প্রামাণ্য তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
কিন্তু, নেতাজীর কানেকশনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল ভগৎ সিংয়ের
জীবনের শেষ পর্বে।
শেষ
পর্বের শুরুতেই ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯২৯
সালের ৮ই এপ্রিল। ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির
লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি হলে বোমা ছুড়লেন।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ,
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক -- ইত্যাদি চিৎকারের সাথে সাথে অ্যাসেম্বলি হলে
ছড়িয়ে দিলেন অজস্র লিফলেট। তারপরেই সম্পূর্ণ নিঃশর্তে ব্রিটিশ পুলিশ
বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। ইচ্ছে করলেই ঝাকে ঝাকে গুলিবর্ষণ করে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে পৃথিবী
থেকে সরিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু তা
তাদের উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, ফরাসি
বিপ্লব ভেইয়াঁর কথা হুবহু উদ্ধৃত করে ভগৎ সিং বলেছিলেন:
“ Loud voice to hear
the deaf.... ঘুমন্ত শাসককে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রবল
শব্দের দরকার।“
এরপরে লাহোরের কোর্টে শুরু হল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলা। কোর্টে বিপ্লবীদের প্রতি সলিডারিটি দেখানোর জন্য একে একে হাজির হয়েছিলেন মতিলাল নেহেরু জহরলাল নেহেরু এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তা, আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই যে, নেতাজীর সাক্ষাৎপর্বটি সম্পর্কে ইতিহাসে কোথাও কোন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় নি।
জি নুরানীর বই Trial of Bhagat Singh-
এ লাহোর ট্রায়াল
কোর্টে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আগমন পর্বটির একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। নুরানী জানিয়েছেন যে, ১৯২৯ সালের ১৯শে অক্টোবর
নেতাজি লাহোর ট্রায়াল কোর্টে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু
জজসাহেব ভগৎ সিং এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের সাথে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে দেখা
করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেন নি। তবে
কোর্টের চত্বরেই ভগৎ সিং-সহ সমস্ত বিপ্লবীরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ইনকিলাব
জিন্দাবাদ স্লোগানে অভ্যর্থনা জানায়। নেতাজীও
উপস্থিত সবাইকে হাত জোড় করে প্রতি-অভিবাদন
জানান। ভগৎ সিংয়ের সাথে
সরাসরি দেখা করার জন্য জজসাহেবকে বারবার অনুরোধ করা
স্বত্বেও তিনি কর্নপাত না করায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কিছুক্ষণ
পরে লাহোর ট্রায়াল কোর্ট চত্বর ত্যাগ করেন।
সে
সময়, জজসাহেবকে উদ্দেশ্যে করে ভগৎ সিং পরিহাস করে
বলেছিলেন:
“ This is the
impression of Punjab Mr. Bose would carry to Bengal.”
পাঞ্জাব
থেকে মিস্টার বসু এই অভিজ্ঞতাই বহন করে
বাংলায় নিয়ে যাবেন!
১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হয়ে কংগ্রেসের প্রায় সকল বড় বড় নেতা কারাবন্দী হলেন। ১৯৩১ সালের ৮ই মার্চ জেল থেকে মুক্তি পেলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। গান্ধীজীর সাথে দেখা করার জন্য তিনি যখন দিল্লি আসছিলেন তখনই খবর পেলেন যে, ভগৎ সিং এবং তাঁর সহকর্মীদের অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ফাঁসি দেওয়া হবে। সুভাষচন্দ্র বসু তার "ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল" বইতে লিখেছেন,
“আমরা গান্ধীজীর উপর চাপ দিলাম যাতে তিনি এই
দণ্ডাজ্ঞা মুকুব করার জন্য বড়লাটকে অনুরোধ জানান। আমি এই দণ্ডাজ্ঞা মুকুব করার ব্যাপারটাকে
চুক্তির একটি শর্ত করার জন্য তাকে বলেছিলাম। কিন্তু বিপ্লব আন্দোলনের মাধ্যমে যারা
বন্দি হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে নিজেকে যুক্ত করতে গান্ধীজী
রাজি হলেন না।”
এখানে
চুক্তি বলতেই গান্ধী-আরউইন চুক্তির কথা বলা হয়েছে। তা অহিংস নীতির প্রতি অটল থাকার দরুন প্রথমে গান্ধীজী রাজি না হলেও পরে কংগ্রেসের নেতাদের এবং জনমতের চাপে পড়ে
তিনি আরউইনসাহেবকে ভগৎ সিং এর ফাঁসি রদ করতে অনুরোধ জানালেন। কিন্তু সেই
অনুরোধ ছিল নিতান্তই লঘু, অসার। তাতে
কোনো আগ্রহ বা উৎসাহের গভীরতা ছিল না।
ফলস্বরূপ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ, সন্ধ্যা ৭টার
কাছাকাছি সময়ে ভগৎ
সিং এবং তার দুই সহকর্মী শুকদেব ও রাজগুরুকে ফাঁসি দেওয়া হভগৎ সিংয়ের ফাঁসির খবর শুনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মন্তব্য
করেছিলেন:
“Bhagat Singh is not a
person. Je symbolizes the spirit of revolt which has taken possession of the
country from one end to other. The spirit is unconquerable, the flame that
spirit has lit up will not die.”
আজ শহীদ-এ-আজম ভগৎ সিংয়ের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।
Copyright : The Galposalpo (Youtube Channel)
..............................................................................................................................................................
Comments
Post a Comment