গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী / Making of Mahatma Gandhi

গান্ধীজী এমনই এক চরিত্র, যাকে প্রত্যেক বছরেই শুধু ভারতবর্ষে নয় সারা বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন দৃষ্টিকোণে মানুষ মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ তাঁকে, সে তিনি যতই বিতর্কিত হন, যতই নিন্দিত হন, কখনো তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

ছোট থেকে শুনেছি, গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলন এই পৃথিবীতে অচল। রক্তপাতের বিরুদ্ধে বিনা রক্তপাতে কোন কিছু হাসিল করা সম্ভব নয়, দেশের স্বাধীনতা তো নয়ই।

আরও শুনেছি, বাম রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীরা একসময় বলতেন, তিনি যতই ভিক্ষুকের বেশে থাকুন না কেন, সাধুর বেশে থাকুন না কেন, তিনি আসলে সমাজের ধনী শ্রেণীর প্রতিনিধি --- একজন ধূর্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

পূর্ব বাংলা থেকে আগত বর্ণ-হিন্দু পরিবারের কাছে তিনিই দেশভাগের জন্য অভিযুক্ত, তিনিই দায়ী। আর হিন্দুত্বের রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে অপছন্দের তালিকায় তিনিই হলেন প্রথম ব্যক্তি। অথচ ... অথচ কি আশ্চর্য দেখুন, নাথুরাম গডসে তাঁর বুকে বুলেট গেঁথে দিলেও মৃত্যুর ৭৩ বছর পরেও তিনি সর্বত্র আছেন। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে তাঁরই মূর্তি এখনও জ্বলজ্বল করছে। একথা অস্বীকার করা যায় না যে, রাজনীতিতে তাঁর অহিংস পথের পথিক কেউই হননি, অথচ আজও তিনি কোথাও কোথাও আইকন, কোথাও বা গালাগাল, তর্ক-বিতর্ক সমালোচনার বিষয়।

আসলে তিনি চিরবিতর্কিত অথচ অমর। সবচাইতে বড় কারণ সম্ভবত, একজন সাধারণ মানুষ থেকে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন মহাত্মা --- a man of great soul. গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী --- এই অবিশ্বাস্য জার্নি আসলে আমাদেরকে মহৎ জীবনে যুক্ত হবার দুর্নিবার আহ্বান জানায়, আমাদেরকে প্রাণিত করে।



 তা, কোন কোন চারিত্রিক গুণাবলী তার মধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়েছিল, যার জন্য তিনি গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী হয়ে উঠেছিলেন --- সে সব বিচার-বিশ্লেষণ গবেষকদের; আমরা কিন্তু দেখতে পাই, শৈশব থেকে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা, অন্ততপক্ষে পাঁচটি প্রধান ঘটনা, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেসব ঘটনা তার জীবনে না ঘটলে হয়তো আমরা নিশ্চিতভাবেই মহাত্মা গান্ধীকে কখনোই পেতাম না। মহাত্মা গান্ধী --- এই গগনচুম্বী চরিত্রটির নির্মাণে সেই ঘটনাগুলি কোথাও ছিল অনুঘটকের ভূমিকায়, কোথাও বা ছিল মজবুত সোপানের চরিত্রে। সেই সব ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়ার জন্য এই ভিডিওর উপস্থাপনা।

#

খুব ছোটবেলায় গান্ধীজীর বাবা গান্ধীজিকে একটি নাটকের বই কিনে দিয়েছিলেন। বইটির নাম “শ্রবণের ভক্তি”। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন বইটির বিষয়বস্তু। হ্যাঁ, শ্রবণের পিতৃ-মাতৃ ভক্তি, শ্রবণের আত্মত্যাগ, মা বাবাকে নিয়ে শ্রবণ এক তীর্থস্থান থেকে আরেক তীর্থস্থানে যাচ্ছেন, এসব কিছুর পাশাপাশি রয়েছে শ্রবণের মৃত্যু, শ্রবণের জন্য তার মা-বাবার বুকফাটা আর্তনাদ। আর নাটকের এই কাহিনী গান্ধীজীর কিশোর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। গান্ধীজী সারাজীবনে শ্রবনকে ভুলতে পারেননি। গান্ধীজী নিজেই বলেছেন, মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করার দীক্ষা তিনি শ্রবনের কাহিনী থেকেই পেয়েছিলেন। এই নাটকের বইটি গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী হয়ে ওঠার সম্ভবত প্রথম সোপান।

#

তবে আরেকটি নাটকের কথা না বললে অন্যায় হবে, যে নাটকটি গান্ধীজিকে সম্পূর্ণ এক নতুন পথের সন্ধান এনে দিয়েছিল। সে পথ হলো সত্যের প্রতি অবিচল থাকার পথ। নাটকটির নাম হল রাজা হরিশচন্দ্র। নাটকে রাজা হরিশচন্দ্রের দুঃখ দুর্দশা দেখে প্রাণ কেঁদে উঠেছিল কিশোর মহাত্মা গান্ধীর ঠিকই, কিন্তু রাজা হরিশচন্দ্রের যে সত্যনিষ্ঠা, সত্যের প্রতি তার অবিচল ভক্তি --- তা কিন্তু গান্ধীজিকে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করেছিল। পরবর্তীকালে আমরা মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রে সত্যের প্রতি তার যে ভালোবাসা, সত্যের প্রতি তাঁর যে শ্রদ্ধা আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেই অনন্যসাধারণ গান্ধীচরিত্রের পিছনে কিন্তু ছিল রাজা হরিশচন্দ্রের কাহিনীর এক গভীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গান্ধীজী নিজেই এ বিষয়ে নিজের কথা বলেছেন তার

“দ্য স্টোরি অফ মাই লাইফ” বইটিতে। সেখানে তিনি বলেছেন, গান্ধীজি থেকে মহাত্মা গান্ধী হয়ে ওঠার পথে এই নাটকটিই তাকে সারা জীবন ধরে আলোড়িত করে গেছে।

#

একবার চান্দ্রায়ন ব্রত করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক ভদ্রমহিলা। সবাই ভেবেছিলেন যে তিনি আর ব্রতের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না । তিনি নিশ্চিতভাবে ব্রতরক্ষার নিয়ম থেকে সরে আসবেন। কিন্তু নিজের সুবিধামতো ব্রত করলাম, আর অসুবিধা হলে সেই ব্রত ভাঙলাম, এমন মানুষ তিনি কখনোই ছিলেন না। যেটা বিশ্বাস করতেন, যেটা করবো বলে মনস্থির করতেন, শত কষ্ট হলেও তার থেকে তিনি কখনোই বিচ্যুত হতেন না। সেবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি অসুস্থ শরীরেই নিষ্ঠার সাথে ব্রত পালন করে গিয়েছিলেন। এই ভদ্রমহিলা আর কেউ নন, তিনি হলেন গান্ধীজীর মা পুতলিবাই। মায়ের এই যে মনের জোর, এই যে বিশ্বাসে আঁকড়ে থাকার এই যে শক্তি, তা গান্ধীজীর জীবনেও দেখা গেছে বারবার। মানুষকে ভালবাসার যে ব্রত গান্ধীজী নিয়েছিলেন, শত দুর্ভোগ, শত কষ্টের মধ্যেও তিনি সেই ব্রত রক্ষার পথ থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কখনো বিচ্যুত হননি। গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী --- এই দীর্ঘ যাত্রাপথ নির্মাণ করেছিলেন যাঁরা, তাদের মধ্যে গান্ধীজীর মা পুতলিবাঈ ছিলেন নিঃসন্দেহে অন্যতম।

#

গান্ধী থেকে মহত্মা গান্ধী হয়ে ওঠার পথে মায়ের পাশাপাশি তাঁর জীবনে আর একজন মহিলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তিনি ছিলেন গান্ধীজীর দাইমা রম্ভা। মায়ের কাছ থেকে গান্ধীজী শুনেছিলেন রামায়ণ, আর দাইমা রম্ভার কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন রাম নাম। গান্ধীজী যখন ছোট ছিলেন, তখন শোনা যায় তিনি নাকি খুব ভূত-প্রেতের ভয় পেতেন। ভয় পেলে তিনি জড়োসড়ো হয়ে পড়তেন। আর তাঁর মনে পড়ে যেত দাইমা রম্ভার নির্দেশ। “মোহনদাস, রাম নামে বিরাট শক্তি আছে, রাম নাম করলে ভুত-প্রেত পালাবার পথ পাবে না। তুমি ভয় পেলে রাম নাম জপ করবে।“

তা, রাম নামের সত্যিই কোন শক্তি আছে কিনা মোহন দাস এর কাছে সে প্রশ্নটা ততো বড় ছিল না। দাইমা যখন বলছেন, তখন ভয় পেলেই রাম নাম জপ করতে হবে। দাইমার প্রতি মোহনদাসের ছিল অগাধ বিশ্বাস। দাইমার প্রতি গভীর সেই বিশ্বাসে ছেলেবেলায় না বুঝে যে রাম নাম জপ শুরু করেছিলেন গান্ধীজী, একদিন সেটাই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনের অবলম্বন। আপনারা সকলেই জানেন, হিন্দুত্ববাদী নাথুরাম গডসের গুলিতে মহাত্মা গান্ধী যখন লুটিয়ে পড়লেন, তাঁর মুখে দুটি শব্দই ছিল “হে রাম”। তা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গান্ধীজি থেকে মহাত্মা গান্ধী হয়ে ওঠার পথে অন্যতম শক্তির উৎস ছিল দাইমার দেওয়া রাম নাম।

#

১৮৯৩ সাল। বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করার পর গান্ধীজি ওকালতি শুরু করলেন। কিন্তু কোন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তিনি হন্যে হয়ে নতুন কাজের সন্ধান করছিলেন। এমন সময় তার কাছে প্রস্তাব এলো দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে হবে। দক্ষিন আফ্রিকায় এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর বড় কারবার আছে। সেই কারবার নিয়ে চলছিল মামলা, আর সেই মামলা দেখছিলেন দাদা আবদুল্লা নামে একজন সিনিয়র উকিল। সেই উকিলকে সাহায্য করার জন্যই গান্ধীজিকে দরকার।

১৮৯৩ সালের এপ্রিল মাস। গান্ধীজী রওনা দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তার সাথে সাথে শুরু হল গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী হয়ে ওঠার অবিশ্বাস্য এক জার্নি।

প্রথম শ্রেণীর টিকিট কেটে গান্ধীজী ট্রেনে উঠেছিলেন ডারবান থেকে। গন্তব্য স্থল প্রিটোরিয়া শহর। সেখানেই একটা কেসের শুনানি ছিল। ট্রেনটি রাত ন'টা নাগাদ নাতালার রাজধানী পিটারমরিটসবার্গ শহরে পৌঁছাল। আর সেখানেই ঘটলো দুঃখজনক সেই ঘটনা।

ট্রেনে উঠে উঠে এসেছিলেন একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ, যিনি কালো চামড়ার মানুষকে মোটেই সহ্য করতে পারতেন না। গান্ধীজিকে ট্রেনের কামরায় দেখে তিনি যথারীতি রেলবিভাগের লোকজনদের ডেকে নিয়ে আসলেন। গান্ধীজীর কাছে যতই ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর টিকিট থাকুক না কেন তাকে পিছনের কামরায় যেতেই হবে। গান্ধীজী সেই সাহেবের কথার কোন যুক্তি খুঁজে পেলেন না। তিনি অবিচলভাবে বসে রইলেন তার নিজস্ব জায়গায়। ফলে যা ঘটার তাই ঘটল। সাহেবের এক হ্যাঁচকা টানে গান্ধীজী সরাসরি প্ল্যাটফর্মে ধরাশায়ী হলেন। গান্ধীজীর সব জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলা দেওয়া হলো প্লাটফর্মে।

শীতের সেইরাতে গান্ধীজী সারারাত প্লাটফর্মে বসে রইলেন। সকাল হতেই রেল কোম্পানির ডিরেক্টরকে এক লম্বা টেলিগ্রাম করলেন। সুতীব্র ভাষায় তিনি প্রতিবাদ জানালেন। আর টেলিগ্রাম করলেন দাদা আবদুল্লাকে এবং পিটারমরিটসবার্গের ব্যবসায়ী সমিতিকে।

তা, সেই দিনের মধ্যেই দাদা আব্দুল্লাহর সাহায্যে বুকিং হল রাতের ট্রেনে। এবারও কিন্তু গান্ধীজীর জন্য রিজার্ভ করা হল পুরো প্রথম শ্রেণীর এক কামরা। ট্রেনে আর কোন ঝামেলা না হলেও যখন তিনি জোহানেসবার্গ যাচ্ছিলেন, তখন কোচে চাপতে গিয়ে আবার ঝামেলা শুরু হলো। কোচের শ্বেতাঙ্গ ম্যানেজারটি তাঁকে আসন ছেড়ে নিচের পাদানিতে বসতে আদেশ করতেই গান্ধীজী সম্পূর্ণ বেঁকে বসলেন। আচমকা শুরু হল বেদম প্রহার। মার খেলেও তিনি কিন্তু কিছুতেই পাদানিতে গিয়ে বসলেন না। অবশেষে কোনক্রমে তিনি জোহানেসবার্গ পৌছলেন এবং সেখান থেকে পৌছলেন প্রিটোরিয়া শহরে।

সেদিন আদালতের কাজ সবকিছু ভালোভাবে মিটে গেলেও পিটারমরিটসবার্গের সেই একটি দিনের লাঞ্ছনা আর অপমানের স্মৃতি তরুণ ব্যারিস্টার মহাত্মা গান্ধীর মনের মধ্যে দগদগে ঘা হয়ে রইল।

ইতিমধ্যে তার দেশে ফিরে আসার সময় উপস্থিত হল। তার বিদায় উপলক্ষে দাদা আব্দুল্লাহ দিলেন এক জমকালো পার্টি। সেই পার্টিতে হঠাৎ একজন ব্যক্তি গান্ধীর হাতে ধরিয়ে দিলেন স্থানীয় একটি দৈনিক খবরের কাগজ। কাগজটি নাম ছিল “নাটাল মার্কারি”। উপরের পৃষ্ঠায় বড় হরফে একটি খবর ছাপা হয়েছে যে খবরটি শিরোনাম ছিল ‘ইন্ডিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি'। খবরটা ছিল এই যে নাটাল এর সংসদীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় সেখানকার ভারতীয় বাসিন্দাদের ভোটাধিকার রদ করার জন্য এটি সরকারি বিল জমা পড়েছে। 

খবরটি পড়েই গান্ধীজীর মনে পড়ল পিটার্সবার্গে সেই শ্বেতাঙ্গ লোকটির দ্বারা তার অপমান আর লাঞ্ছনার কথা। আর কালবিলম্ব না করে তিনি তখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, আর নয়, এবার তিনি লড়বেন, লড়বেন শ্বেতাঙ্গদের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, লড়বেন আইনি পদে, লড়বেন রাজনৈতিক ভাবে। সাদা চামড়ার মানুষদের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীজী এক নতুন ধরনের আন্দোলনের জন্ম দিলেন। এই বিশ্বে তার সেই আন্দোলনের নাম হল অহিংস আন্দোলন।

#

 এই আন্দোলনে এমন কিছু করা চলবে না যার সাথে মিথ্যের যোগ আছে, যার সাথে হিংসার যোগ আছে। গান্ধীজী বললেন, শত্রুকে হিংসা করা চলবে না, অত্যাচারীকে হিংসা করা যাবে না। অহিংসা বজায় রেখে, প্রেম বজায় রেখে নিষ্ঠুর অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই মুখোমুখি হতে গিয়ে এমন হয়তো অবস্থা আসবে, যেখানে শত্রু ঝাঁপিয়ে পড়বে তার সর্বশক্তি দিয়ে, অত্যাচারী নামিয়ে আনবে তার চরমতম অত্যাচার, কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। গান্ধীজী বললেন, আমি যদি সত্যের পথে থাকি, আমি যদি সংযমের পথে থাকি, আমি যদি অহিংসার পথে থাকি, তাহলে আমি মার খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ জানিয়ে যাব। এমন একটা সময় আসবে, যখন সেই শত্রুর সেই অত্যাচারীর মনের পরিবর্তন ঘটবে। সে নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং আত্মসমর্পণ করবে। এই অগাধ বিশ্বাস থেকে জন্ম নিয়েছিল গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলন। এই আন্দোলন সত্যকে সব সময় অবলম্বন করে চলত বলে, সত্যকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে চাইতো বলে, সত্যের প্রতি আসক্তি বা আগ্রহ দুর্নিবার করে তুলতে বলে, এই আন্দোলনের আরেক নামই হলো সত্যাগ্রহ আন্দোলন।

#

১৯২০ থেকে ১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৩০-এর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন, ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে গান্ধীজী সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন অহিংসা আন্দোলনের , সত্যাগ্রহ আন্দোলনের অভূতপূর্ব এক দর্শন। গান্ধীজীর এই দর্শন সারাবিশ্বে প্রতিভাত হয়ে উঠলো গান্ধীবাদ বা গান্ধীইজম বলে, যার দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, প্রভাবিত হয়েছিলেন বিশ্বের প্রবাদপ্রতীম দুই নেতা --- দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আমেরিকার জনদরদী নেতা মার্টিন লুথার কিং।

আর ধীরে ধীরে এইসব ঘটনার সাথে সাথে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতবর্ষের বুকে হয়ে উঠলেন মহাত্মা গান্ধী।

এই ভিডিও শেষ করার আগে আমি শুধু একটিই কথাই বলবো যে, মহাত্মা গান্ধীর অনেক রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে বেশ বিতর্কিত। সে সব বিতর্কে আমি প্রবেশ করতে চাইছি না, যেহেতু ভিডিওর শিরোনাম দিয়েছি ‘মেকিং অফ গান্ধীজি'। কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর দর্শন, গান্ধীবাদ বা গান্ধীইজম -- তাকে শ্রদ্ধা না করে আর কোন উপায় থাকতে পারে না। হিংসা আর হানাহানিতে উন্মত্ত এই বিশ্বে শান্তি এবং সমৃদ্ধির খোঁজে অসংখ্য অগণিত মানুষ আজও তাঁর মত, তাঁর পথকেই অবলম্বন করে চলেছে। গান্ধীজীর শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই অন্তর্নিহিত।

#

মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে বলেছিলেন,

“কয়েকযুগ কেটে যাবে, তবুও মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাবে যে, এমন একজন মানুষ রক্তমাংসের শরীরে সত্যিই এসেছিলেন, চলাফেরা করেছিলেন মাটির এই পৃথিবীতে।“

আজ ২রা অক্টোবর। গান্ধীজীর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে তাকে আমার হৃদয়ের শ্রদ্ধা এবং প্রণাম জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।



..... ..... .... ..... .... .... ..... .... .... .... .... .... .... ... 

Copyright:  The Galposalpo

***

তথ্যঋণ:

১) দেশ পত্রিকা, অক্টোবর ২০১৯

২) দেশ পত্রিকা, অক্টোবর, ২০২০

৩) হারিয়ে যাননি আজও (প্রবন্ধ) by সুমিত মিত্র

৪) তর্কে-প্রতর্কে গান্ধীজী (প্রবন্ধ) by দীপেশ চক্রবর্তী

৫) গান্ধী by সুভাষ ঘোষাল

৬) উইকিপিডিয়া




Comments

Popular posts from this blog

সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য : জীবনী বা জীবন কাহিনী / Sadhak Kamalakanta Bhattacharya Life Story or Biography

অদ্বৈত মল্লবর্মণ এক অসামান্য নদীর নাম : অসামান্য জীবনী / Adwaita Mallabarman Life Story

অতুলপ্রসাদ সেন ও নিষিদ্ধ সম্পর্কের গল্প / Atulprasad Sen Life Story on Forbidden Relationship