রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন : বছরে দু'বার রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন
এখানে যা আলোচিত হয়েছেঃ ১) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন নিয়ে প্রথম ঘোষণা
২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম জন্মদিন পালন ৩) পরবর্তী ২৩ বছরের একটা হদিশ এবং তার সূত্র ৪) ৫০ বছর পূর্তির রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনের বিবরণ ৫) যে বছর প্রথম দু'বার রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন হল ৬) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জন্মদিন
আজ আমরা কথা বলবো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনগুলিকে (Rabindranath Tagore Birthday Celebration) নিয়ে – যে কথাগুলি, যে তথ্যগুলি আমাদের অনেকেরই জানা নেই বলে আমার ধারণা। সবচাইতে ইন্টারেস্টিং ঘটনাটি শেষের দিকে আপনাদের সামনে আনবো । সুতরাং বরাবরের মত এই ভিডিও আরেকটি নলেজেবল আর্টিকেল হতে চলেছে। অর্থাৎ আশা করছি, আপনারা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
# জন্মদিন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম ঘোষণাঃ
"এসো হে বৈশাখ" – বৈশাখ মাস দরজায় কড়া নাড়লেই বাঙালি মাত্রই আমরা
চারিদিকে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর একটা আবহাওয়া, একটা আয়োজন--- সবকিছুর একটা flavour আমরা যেন আগে থেকেই
টের পেয়ে যাই। এই সমস্ত আয়োজন অনুভব উপলব্ধি -- সবকিছুর এক উদযাপনের দিন হল পঁচিশে বৈশাখ।
১৮৮৬ সালের ৭ই মে, বাংলা ১২৯৩ এর ২৫শে বৈশাখ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫ বছর পূর্ণ করেছিলেন। তার সেই পঁচিশতম জন্মদিন
উপলক্ষ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে
সেদিন কিন্তু কোথাও কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। শুধু তাই নয়, এর
আগেও কিন্তু কখনো তার জন্মদিন পালন করে কোন অনুষ্ঠান
হয়নি। সেদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যা আগে
কখনো কোথাও করেননি, সেই কাজটি করলেন। তিনি এর আগে নিজের জন্মদিন নিয়ে কোথাও একটি
কথাও বলেননি, কিন্তু সেদিন তিনি শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে নিজের জন্মদিন নিয়ে যা
লিখেছিলেন, তা সত্যি অপূর্ব। লিখেছিলেন:
“আজ আমার জন্মদিন – পঁচিশে
বৈশাখ ---- পঁচিশ বৎসর পূর্ব্বে এই পঁচিশে বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ
হয়েছিলুম – জীবনে এমন আরো অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে এই আশীর্ব্বাদ
করুন। জীবন অতি সুখের।“
লক্ষ্য করুন তিনি লিখেছেন, আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ
হয়েছিলুম --- বাস্তবিকই তাই, ধরণী সত্যিই বাধিত হয়েছিল। এমন রসপূর্ণ লেখা
কবিগুরুর পক্ষেই সম্ভব।
#এই রচনাটিকে ভিডিওত দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
# কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম জন্মদিন পালন শুরু হল?
যাইহোক, এবার মূল কথায় আসি। শুনলে অবাক হবেন যে, সেসময় ঠাকুরবাড়িতে কোন জন্মদিন পালন হতো
না। এর মূল কারণ ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি
ছিলেন ব্রাহ্ম। ব্রাহ্মবাড়িতে
তো হিন্দুদের মতো পূজা-আর্চা কিছুই হতো না। সে সময় হিন্দুঘরে জন্মতিথি পালন হত পুজো,
প্রসাদবিতরণ এবং জলযোগের মাধ্যমে। কিন্তু ব্রাহ্মবাড়িতে তো এসবের কোনও বালাই ছিল না। সুতোরাং কে কবে কখন
জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কেউ তো মনেই রাখত না। কবিগুরুর
ভাগ্নি সরলাদেবী অর্থাৎ কবিগুরুর দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর মেজোকন্যা সরলা দেবী এই বিষয়টি
নিয়ে চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি
লিখেছেন:
“ঘরে ঘরে ছেলেমেয়ের জন্মতিথি পূজার অনুষ্ঠান
না থাকায় আমরা কে যে কবে জন্মেছি, তার ধার ধারতুম না। আমাদের জন্মের তারিখ বা তিথি,
ঠিকুজি বা কুষ্ঠিতে তোলা থাকতো, লোকের মনে বছর বছর তুলে ধরা হতো না।“
ঠাকুরবাড়ির
এই ব্যবস্থাটিকে কিন্তু সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজোদাদা
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। সেবার তিনি বিলেত থেকে ফিরে এসে একেবারে সাহেবমেমদের কায়দায় নিজের মেয়ে
ইন্দিরা দেবীর জন্মদিন পালন করলেন। অর্থাৎ জন্মতিথির পুজোর অংশটুকু বাদ দিয়ে জন্মদিনে অতিথি
আপ্যায়ন, উপহার প্রদান এবং হইচই – এই সবের মাধ্যমে ইন্দিরা দেবীর জন্মদিন উদযাপিত
হল।
বলাবাহুল্য,
জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর পরিকল্পনায় তাঁর মেয়ে ইন্দিরা দেবীর সেই জন্মদিন পালনের
অনুষ্ঠান দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সরলা দেবী। এরই
মধ্যে এসে গেল পরের বছর অর্থাৎ ১৮৮৭ সালের ৭ই মে। কবিগুরু জীবনের ২৬টি বসন্ত
অতিক্রম করে সাতাশে পদার্পন করলেন। সে বছরেই প্রথম পালিত হল রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জন্মদিন। জন্মদিন
কে পালন করলেন? পালন করলেন আর কেউ নন, পালন
করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ভাগ্নী সরলা দেবী। তা কিভাবে সেই
প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালিত হল? চলুন এবারো আমরা জেনে নেই সরলা দেবীর বয়ান থেকে। তিনি জানিয়েছেন:
“তিনি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)ও নতুনমামা
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ থাকেন মেজমামিদের সঙ্গে ৪৯ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে। ... রবিমামার প্রথম
জন্মদিন উৎসব আমি করাই। ... অতি ভোরে উল্টাডিঙ্গির কাসিয়াবাগান
বাড়ি থেকে পার্কস্ট্রিটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল
ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনানো বেল ফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য
ফুল ও একজোড়া ধুতিচাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলেন --- পাশেই
নতুনমামার ঘর। ‘রবির জন্মদিন' বলে একটা সাড়া পড়ে গেল। সেই বছর থেকে
পরিজনদের মধ্যে তার জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হলো।“
# পরবর্তী ২৩ বছরের একটা হদিশ এবং তার সূত্রঃ
এ তো গেল ২৭ বছর বয়সে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা। এরপরের ঘটনাক্রম বেশ আশ্চর্যজনক। ঘটনাক্রম বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, কবিগুরুর পরবর্তী জন্মদিনগুলির কথা। শুনলে অবাক হবেন যে কবিগুরুর প্রথম জন্মদিন পালন হল ২৭ বছর বয়সে, সেই ২৭ বছর বয়েস থেকে কবিগুরু যে বছরে ৫০ বছরে পদার্পন করলেন অর্থাৎ ১৯১০ সাল পর্যন্ত – এই দীর্ঘ ২৩ বছরে কবিগুরুর জন্মদিন পালনের ইতিহাস তেমনভাবে কোথাও উল্লেখ করা নেই। যেখানে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে এটুকুই জানা গেছে যে, কোন কোন বছর কবির জন্মদিন পালিত হয়েছে, আবার কোন কোন বছর কবির জন্মদিন পালিত হয়নি।
জন্মদিন যে বছরগুলিতে পালিত হয়েছে, তা জানা গেছে মাত্র দুটি সূত্র থেকে।
এক. ঠাকুরবাড়ির হিসাবপত্রের খাতা। সেখানে লেখা
আছে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে উপহার খরিদ ৪ টাকা, আবার
কোন বছরে লেখা জন্মদিনের উপহার ২০ টাকা।
হিসেবের খাতায় লেখা
গুলো দেখে অনুমান করা যায় যে কবিগুরুর জন্মদিন সে বছর পালিত হয়েছিল।
আর
দ্বিতীয় সূত্র রবীন্দ্রনাথের সংগ্রহে যে বইগুলি ছিল তাতে দেখা যায়, কোন কোন বইতে
লেখা রয়েছে, রবিকাকার বা রবিমামার জন্মদিনে উপহার। এই লেখাগুলো
দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে, জন্মদিন পালিত হয়েছিল। কিন্তু সেইসব বছরগুলিতে কিভাবে জন্মদিন
পালিত হলো, কারা কারা আসলেন ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ কোন ইতিহাস কোথাও পাওয়া যায়নি। আবার এটাও দেখা গেছে যে কোন কোন বছর তার জন্মদিন আদৌ পালিত হয়নি। যেমন ধরুন, যে
বছর তিনি শিলাইদহে ছিলেন, পদ্মার বুকে বোটে সময় কাটাচ্ছিলেন, অথবা
যে বছর তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হল কিংবা যে বছর তার কন্যা রেনুকা দেবি
ভয়ঙ্কর রকমের অসুস্থ হয়ে পড়লেন -- এসমস্ত বছরগুলিতে জন্মদিন পালিত হয় নি।
# ৫০ বছর পূর্তির রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনের বিবরণঃ
কিন্তু
যে বছরে কবিগুরুর ৫০
বছর পূর্তি হলো, অর্থাৎ ১৯১১ সালে, শান্তিনিকেতনে তাঁর জন্মদিন কিন্তু বেশ ধুমধাম করে
পালিত হল। সেবার জন্মদিনের বেশ আগেই চারুচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সুকুমার রায়, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ
শান্তিনিকেতনে হাজির হয়েছিলেন। কলকাতা থেকেও অনেকেই শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন,
যাদের মধ্যে ছিলেন সীতাদেবী এবং শান্তাদেবী। টানা
তিন দিন ধরে সেবার জন্মদিনের উৎসব পালিত হয়েছিল।
৫০ বছর পূর্তিতে রবীন্দ্রজন্মোৎসবের বিবরণঃ
২৩শে
বৈশাখ অর্থাৎ ৬ই মে : সকালবেলায় অনুষ্ঠিত হলো ছাত্রদের স্পোর্টস।
দুপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর খসড়া পাণ্ডুলিপি থেকে জীবনস্মৃতির কিছু অংশ পড়ে শোনালেন।
২৪শে বৈশাখ অর্থাৎ ৭ই মে : সকালবেলায় অজিত কুমার চক্রবর্তী তাঁর
বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ' পড়ে শোনালেন। সন্ধ্যেবেলায় অনুষ্ঠিত হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনবদ্য নাটক ‘রাজা’। নাটকে ঠাকুরদাদার ভূমিকায় প্রশংসনীয় অভিনয় করলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর।
২৫শে বৈশাখ অর্থাৎ ৮ই মে: ভোরবেলায় আম্রকুঞ্জে জন্মোৎসবের আসর বসে। আলপনা ধূপধুনো প্রদীপ গন্ধপুষ্প প্রভৃতি দিয়ে তৈরি হয়েছিল সুন্দর একটি
বেদী। সবাই স্নান করে হাজির হয়েছিলেন আম্রকুঞ্জে। ছাত্ররা গান গাইলো। ক্ষিতিমোহন বিধুশেখর নেপালচন্দ্র আচার্যের
কাজ করলেন। তারা ঋগ্বেদ অথর্ববেদ প্রভৃতি থেকে
মঙ্গলগীতি আবাহন ইত্যাদির মূল ও বাংলা অনুবাদ পাঠ করলেন। এখানে উল্লেখযোগ্য,
নেপালচন্দ্র অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের শেষে বলেছিলেন, ‘তোমরা
সকলেই গুরুদেবকে ভক্তি করো, কিন্তু তাকে কখনও যেন ঈশ্বরের স্থানে বসিয়ো না’।
অনুষ্ঠানের শেষে সেদিন, কবিকে প্রণাম করার ধুম পড়ে গিয়েছিল। প্রায় ৩০০ মানুষ লাইন দিয়ে কবিকে প্রণাম
করছেন এবং তার জন্য বহুক্ষণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। সে এক আশ্চর্য দৃশ্য।
আমরা লক্ষ্য করি, এরপর থেকে কিন্তু কবিগুরুর প্রতিটি
জন্মদিনের একটা বিবরণ কোথাও না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে অর্থাৎ পরবর্তী জন্মদিনগুলো
বেশ ঘটা করেই পালিত হয়েছিল। কিন্তু 50
বছর পূর্তিতে যেরকম টানা তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হল, এরকম ঘটনা
অন্য কোনো জন্মদিনে লক্ষ করা যায়নি।
# যে বছর প্রথম দু'বার রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন হলঃ
আমি এবার চলে আসব ভিডিওর সবচাইতে ইন্টারেস্টিং পার্টে। তারিখটা হলো ১৯৩৬ সালের ৮ই মে, বাংলা ১৩৪৩ এর ২৫শে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭৫ বছর পার করে ৭৬এ পদার্পণ করেছেন। এ বছরেই কবিগুরুর জন্মদিন শান্তিনিকেতনে প্রথম দুবার পালিত হল।
ব্যাপারটা ছিল এইরকম, শান্তিনিকেতনে গরমের ছুটি পড়ে যেত পয়লা বৈশাখ থেকে,
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালনের জন্য অনেকেই সেই গরমের ছুটির মধ্যেও ২৫শে
বৈশাখ পর্যন্ত থেকে যেতেন, যেটা ছিল বাস্তবিক অর্থে খুব কষ্টকর। এই সমস্যাটি কে গুরুত্ব দিয়ে কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মতিতে সে বছরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জন্মদিন পালন হবে বর্ষবরণের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে। সেই সিদ্ধান্ত
অনুসারে শান্তিনিকেতনে সে বছর পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের পরেই বেশ ধুমধাম
করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালিত
হয়।
আবার সে বছরেই পঁচিশে
বৈশাখের দুদিন আগে ২৩শে বৈশাখে ঘরোয়াভাবে কবিগুরুর জন্মদিন পালন করা হয়। ২৫শে বৈশাখের দিন তিনি বরানগরে এসেছিলেন পেন নামে একটি বিখ্যাত
আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে।
এরপর
থেকে কিন্তু শান্তিনিকেতনে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সাথে সাথে
কবিগুরুর জন্মোৎসব পালিত হতে শুরু করে,
আমি যতদূর জানি সেই
ট্রাডিশন আজও চলছে।
# রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জন্মদিন, এবারেও দু'বার উদযাপন ঃ
তবে
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আরেকবার শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর উপস্থিতিতে দুবার জন্মদিন
পালিত হয়েছিল। সময়টা
ছিল ইংরেজি ১৯৪১ সাল, বাংলা
১৩৪৮.. সে বছর কবি ৮০ বছর পার করে ৮১ বছরে পদার্পণ
করেছেন। কবিগুরুর জন্মদিনের শেষ উৎসবের বছর। শান্তিনিকেতনে সে বছর পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সাথে সাথে
কবিগুরুর জন্মদিনও যথারীতি পালিত হল। তখন তিনি খুবই অসুস্থ। তবু শারীরিক সেই অসুস্থতা ও দুর্বলতাকে উপেক্ষা করে
সেদিন কবিগুরু উদয়নের দক্ষিণের বারান্দায় এসে বসেছিলেন। রানী চন্দ
একটা শালপাতার ঠোঙায় বেল জুই কামিনী ফুল তুলে তার পায়ে সমর্পণ করে প্রণাম করলেন। কবি ফুলের ঠোঙাটি হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে
শুঁকতে বললেন, ‘আজ আমার জীবনের ৮০ বছর পূর্ণ হলো! আজ দেখছি
পিছন ফিরে -- কত বোঝা যে জমা হয়েছে; বোঝা বেড়েই চলেছে।‘
১৫ই এপ্রিল ছিল দোসরা বৈশাখ। কবিগুরুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের
সংবাদ বিশদে কাগজে প্রকাশিত হলো।
এরপর
এসে গেল ২৫শে বৈশাখ। কবিগুরুর জীবনের শেষ জন্মদিন। সেদিন ভোরবেলা বৈতালিক সংগীত গাওয়া হলো । তারপর মন্দিরে উপাসনায় প্রার্থনা সংগীত
গাওয়া হলো। সন্ধ্যেবেলায় কবিগুরুর বাসস্থান উত্তরায়ণে এক অনাড়ম্বর উৎসব অনুষ্ঠিত হয় উপস্থিত
শ্রমিকরা কবি কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করলেন। সবশেষে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা সবাই মিলে কবিগুরু
রচিত একটি প্রহসন ‘বশীকরণ’
অভিনয় করে দেখালেন। কবিগুরু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সেই প্রহসনটি উপভোগ করলেন। এভাবেই ২৫শে বৈশাখে সাঙ্গ হল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জন্মদিনের অনুষ্ঠান।
মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সৃষ্টিশীল
ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগষ্ট, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আজ এখানেই শেষ করছি।
#উপরের বক্তব্য ভিডিওতে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যঋণ
১)
জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ
By কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত
2)
তুমি কোনদিন দাড়ি রেখোনা
By ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
৩)
আনন্দবাজার পত্রিকা
৪)
পশ্চিমবঙ্গ (রবীন্দ্রসংখ্যা)
৫)
উইকিপিডিয়া



Comments
Post a Comment