মৃনাল সেন ও রেবা : একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী / Mrinal Sen and Reba : Sad Life Story
মৃণাল সেন ও রেবার কাহিনী (Sad story of Mrinal Sen and Reba ) সত্যিই বড় মন খারাপ করে দেয়। কাহিনীটি একই সাথে তামান্না সেতুরও (Story of Tamanna Setu) কাহিনী। সবচেয়ে বড় কথা কাহিনীটি একদিকে যেমন মর্মস্পর্শী তেমনি অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির (Story of Communal Harmony)একটি দুর্লভ দৃষ্টান্ত।
এরপর বছরের পর বছর গড়িয়ে চলে। একদিন রাস্তার ধারে, বাড়ির জমিতেই মসজিদ তৈরি হল। পাড়ার অনেক মুসলমান বেশ বিরোধিতা করলেন, কারণ একই বাড়িতে মসজিদের সাথে সাথে হিন্দুদের মঠের উপস্থিতি তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না, তারা চাইছিলেন মঠটিকে ভেঙে ফেলা হোক। কিন্তু তামান্নারা সেসব ধর্মীয় চাপকে তেমন পাত্তা দিলেন না।
এদিকে পুকুরের পাড় ভাঙছে, স্মৃতিসৌধটি প্রায় তলিয়ে যায়।
# লেখাটিকে ভিডিওতে দেখতে ও শুনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
এমনই এক সময়ে একদিন কলকাতা থেকে বাড়িটির কাছে এসে শেষবারের মতো দাড়ালেন রেবা সেনের দাদা। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতে তিনি এসেছিলেন অতীতকে আরেকবার ছুঁয়ে দেখার প্রবল এক নেশায়, হয়তো বা এসেছিলেন ছোট বোন রেবা সেনের সঙ্গে দেখা করতে।
সেদিন তিনি পুরো বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন। অদ্ভুত এক নষ্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে বাড়িটির দেওয়াল বারবার ছুঁয়ে দেখছিলেন। বাড়ির উঠোনে এসে কান্না হাসি মেশানো গলায় বলেছিলেন, এই উঠোনে আমার বোনটা খেলত।
তারপর পুকুর পাড়ে এসে তিনি চুপটি করে দাঁড়িয়েছিলেন বহুক্ষণ। ছোট্ট টুকটুকে রেবা সেন তখন হয়তো তাকে বলছিল, দাদা সাতচল্লিশের দেশভাগের পর তোমরা আমাকে ছেড়ে, আমাকে একা ফেলে নিরুদ্দেশে চলে গেছো। কিন্তু দ্যাখো, দেশভাগ আমাকে কিছুতেই ভিটেছাড়া করতে পারেনি। আমি মরে গিয়ে বেঁচে আছি আজও।
ভারী চশমার পিছনে দাদার চোখ দুটো সেদিন হয়তো ভিজে উঠেছিল!
সেদিনের পর দাদা আর কখনো ফিরে আসেন নি সেই পুকুর পাড়ে, রেবা সেনের কাছে।
এর পরের ইতিহাস শুধুই হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। সেই বাড়িটিও আজ আর নেই, সেই স্মৃতিসৌধটিও আজ আর নেই।
রেবা সেনের দাদাও আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরে। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বাঙালি তথা ভারতবাসীর গর্ব, ভিন্ন ধারার প্রখ্যাত পরিচালক, চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন।
মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ই মে, আজকের মতোই এরকম একটি দিনে ফরিদপুরের সেই গ্রাম ঝিলটুলিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৭ বছর সেখানে কাটানোর পর ১৯৪০ সালে পড়াশুনার জন্য তিনি ফরিদপুর থেকে কলকাতায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে এই কলকাতা শহরেই শুরু হয়েছিল চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তার অসামান্য এক নতুন জীবন।
# উপরের লেখাটিকে ভিডিওতে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Copyright : The Galposalpo (YouTube Channel)
তথ্যঋণ: ১) তৃতীয় ভুবন By মৃণাল সেন
২) মৃণাল সেন ও তার মৃত বোন রেবা By তামান্না সেতু
৩) সহমন ডট কম ৪) উইকিপিডিয়া



Comments
Post a Comment