Posts

Showing posts from October, 2025

ছকভাঙা জগদ্ধাত্রী পূজা : কৃষ্ণনগরের গল্প / Exceptional Jagadhatri Puja : Krishnanagar

Image
জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালির ঐতিহ্য। প্রতি বছর কৃষ্ণনগর-চন্দননগরসহ শান্তিপুর, নবদ্বীপ এবং আরো অন্যান্য জায়গায় ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলার বুকে অনুষ্ঠিত হওয়া অজস্র জগদ্ধাত্রী পূজার মধ্যে বেশ কিছু পূজা আছে যা একেবারেই ব্যতিক্রমী, বলা যায় ছকভাঙ্গা পুজো ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এই পুজোগুলি আসলে অনন্যসাধারণ। বলাবাহুল্য, সেই পুজোগুলিকে খুঁজে বার করা এবং সেই পুজোগুলি কী কারনে ব্যতিক্রমী বা ছকভাঙ্গা ---- তা যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করা বেশ কষ্টসাধ্য। এই প্রতিবেদনে সেই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে করা হয়েছে। এই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে কৃষ্ণনগর শহরের জগদ্ধাত্রী পূজাগুলিকে। এই প্রতিবেদনে পাঠ করে, আমার ধারণা, পাঠক সহজেই ব্যতিক্রমী জগদ্ধাত্রী পুজোগুলির অবস্থান, ব্যতিক্রমী হওয়ার কারণ ও যুক্তিসহ ব্যাখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে একটা ধারণা তৈরি করে নিতে পারবেন। ভবিষ্যতে চন্দননগর সহ অন্যান্য জায়গার ব্যতিক্রমী পুজোগুলিকে নিয়ে গবেষণা ভিত্তিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। যাইহোক, এবার ইতিহাসের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। কৃষ্ণনগর । দুটি নদীর ভালোবাসায় ধী...

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ : অসামান্য শিল্পীজীবনের গল্প / Abbasuddin Ahmed Unknown Life Story

Image
১৯২৯ সাল। ব্রিটিশ ভারতের রংপুর জেলা। সেই জেলার অন্তর্গত চিকনমাটি গ্রামে এক বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। গ্রামের ফজিলুদ্দীন সরকারের বড় মেয়ে বেগম লুৎফুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হলো কোচবিহার জেলার এক বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পীর সঙ্গে। বিয়ের রাতে ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। সে রাতে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিল্পীর কলকাতার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব। ছিলেন বন্ধু তকরিম আহমেদ, যিনি খুব ভালো সেতার বাজাতে পারতেন। তা, বিয়ের পর অতিথি, পাড়া-প্রতিবেশীদের অনুরোধে, যার বিয়ে, সেই বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পীর গানের অনুষ্ঠান শুরু হল। অনুষ্ঠানে যেইনা তক্রিম আহমেদ তার সেতারে টুংটাং আওয়াজ তুলেছেন, অমনি আশেপাশের রক্ষণশীল মুসলিমরা তুমুল আপত্তি জানালো। মুসলমানের বিয়েবাড়ি -- এখানে গান-বাজনা, যন্ত্রসংগীত এসব কেন! এসবের তো কোন সামাজিক প্রচলন নেই। আচমকা সেই বাধায় কলকাতার বন্ধু-বান্ধবরা বেশ মন:ক্ষুন্ন হলেন। আর বন্ধুদের অপমানে, সদ্য বিয়ে করলেন যে লোকসংগীত শিল্পী, তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হলেন। গানের অনুষ্ঠানে গন্ডগোলের সময়, তিনি সবার অলক্ষ্যে, কাউকে কিছু না বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই রাতে নিঃশব্দে বেরিয়ে চলে যান। সে রাতে ভীষণ ঝ...

ছট পূজা : শুধুমাত্র কি বিহারের উৎসব? / Chhath Puja : Is it only a Bihar festival?

Image
ছট পূজা বা ছট উৎসব সম্পর্কে আমরা সবাই মোটামুটি তিনটি বিষয় ভালোভাবেই জানি। প্রথমত, এই উৎসব সূর্যদেব এবং তাঁর স্ত্রী ঊষা, যিনি দেবী ষষ্ঠী নামে পরিচিত --- এই দুজনের নামেই উৎসর্গ করা হয়। দ্বিতীয়তঃ আমরা জানি যে, দীপাবলি উৎসবের পরেই কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অর্থাৎ শুক্লা চতুর্থী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত এই ব্রত পালিত হয়, যার মধ্যে ষষ্ঠী তিথি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য , তাৎপর্যপূর্ণ । সবশেষে আমরা এটাও জানি যে, বিহার রাজ্যের মানুষদের মধ্যেই এই ছট উৎসব পালন করার আধিক্য সর্বাধিক, যদিও বিহার সংশ্লিষ্ট ঝাড়খন্ড এবং উত্তরপ্রদেশে, এমন কি, নেপালেও এই উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়। বিহারে এই উৎসবটা বিশাল একটা স্কেলে পালিত হয় বলে আমরা সবাই বলি যে, ছট পূজা হল শুধুমাত্র বিহারের উৎসব। আর এখানেই একটা প্রশ্ন ওঠে যে, ছট পূজা কি তাহলে একটি আঞ্চলিক উৎসব? শুধুমাত্র বিহারের উৎসব? নাকি নাকি এর শেকড় প্রসারিত রয়েছে বহুদূর পর্যন্ত? আজকের ভিডিওতে আমরা এসব প্রশ্নের একটা বিশ্লেষণমূলক মীমাংসা করার চেষ্টা করব। তবে তার আগে আমরা জেনে নেব বিহারের ছট উৎসব সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। দেখুন, বিহারে প্রায় প্রতি...

স্বপনকুমার : এক জিনিয়াসের ধূসর গল্প / Swapan Kumar : Story of a forgotten Star

Image
“রাত তখন ঠিক কাঁটায়কাঁটায় আটটা বাজে। হ্যান্ডস আপ। মাথার উপর হাত তোলো শয়তান। পালাবার চেষ্টা করলে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো।“ --- কি .... বলুন এই লাইনগুলোর কথা কি মনে পড়ছে আপনাদের? মনে কি হচ্ছে না, টান টান বারুদঠাসা এমন থ্রিলার আগে কোথায় যেন পড়েছেন? হ্যাঁ,আজ যার কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে এসেছি, আমি জানি, আমার মতো অজস্র অসংখ্য মানুষের কৈশোরের আকাশ জুড়ে তিনি বিচরণ করতেন। একটু হয়তো ভুল বললাম, তিনি হয়তো নন, তাঁর লেখা রোমাঞ্চকর গোয়েন্দাকাহিনীগুলোতেই আমাদের শৈশব-কৈশোর বুঁদ হয়ে থাকতো। আসলে লেখক হিসাবে তিনি সে সময় যেমন অন্তরালে ছিলেন,আজও সেই অন্তরালেই রয়ে গেছেন। তিনি এক বিস্মৃত প্রতিভা ----বলা যেতে পারে, চিরবঞ্চিত এক ... এক জিনিয়াস ---মেঘে ঢাকা একতারা ...... কখনো যার নাম স্বপনকুমার কখনো শ্রীভৃগু, কখনো বা ডাক্তার এস এন পান্ডে। স্বপনকুমার নামটা উচ্চারণ করলেই হুড়মুড়িয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি বা তার সহকারী রতনলাল। ১৯৫৩ সালে দীপক চ্যাটার্জি প্রথম পাঠকের দরবারে এসে হাজির হয়, স্বপনকুমারের লেখা সেই উপন্যাসের নাম ছিল “অদৃশ্য সংকেত”। সেইশুরু,...

মান্না দে : কেমন করে গায়ক হলেন / Manna Dey : How a Singer born : A true Motivational Story

Image
মান্না দে ছোট থেকেই বেশ ডাকাবুকো ছিলেন। সে সময় তাঁর নেশা ছিল তিনটি : এক.মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ি ওড়ানো, দুই,যতীন্দ্রচরণ গুহ তথা গোবরবাবুর আখড়ায় গিয়ে নিয়মিত কুস্তি করা, আর তিন,সময়-সুযোগ পেলেই এন্তার ফুটবল খেলা। না,সেই কিশোরবেলায় সঙ্গীত নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন মাতামাতি একদমই ছিল না। গান শেখাতো দূরের কথা,যেখানে গানের চর্চা হত,তার ত্রিসীমানায় পারতপক্ষে তিনি কখনোই পা রাখতেন না। জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিল, গোবর বাবুর মত একজন পালোয়ান হবেন। বাড়িতে ছিল সঙ্গীতের চর্চা। আপনারা হয়তো জানেন,মান্না দের ছোটকাকা,কৃষ্ণচন্দ্র দে,তিনি ছিলেন সে সময়ে ভারতবর্ষের একজন অন্যতম নামী গায়ক, গানের জগতে অসাধারণ এক বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব। তাঁর সাথে সময় কাটাতে প্রায়ই বাড়িতে চলে আসতেন শচীনদেব বর্মন, ওস্তাদ হাফিজ আলী খাঁ,ওস্তাদ ফৈয়জ খাঁ ---- এরকম সব তাবড় তাবড় শিল্পীরা। তা, ছোটকাকার সেই গানের ঘরে মান্না দে-সহ বাড়ির ছোটদের প্রবেশ কিন্তু ছিল একদম নিষিদ্ধ। তবে মান্না দে-কে মাঝে মাঝে সেই গানের ঘরে ডেকে নিতেন ছোটকাকা নিজেই। ঘরে বসে মান্না দে ছোটকাকার নির্দেশে গানের কথা,গানের সুর-তাল,...

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : প্রথম চুম্বন, মদ্যপান আর প্রেমের গল্প / Sunil Gangopadhyay : Story of First Kiss, Wine and Love

Image
৩. প্রথম চুম্বন শৈশবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্যিক বিমল চন্দ্র ঘোষ তথা মৌমাছিরসংস্থা মনিমালার সদস্য ছিলেন। সেবার পাড়ায় মনিমালার উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল সরস্বতী পূজো।সেদিন কিন্তু কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা কিনে ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে মন্ডপে নিয়ে আসতে আসতে বেজে গেল রাত নটা।এরপর প্রতিমাকে বেদীতে বসাতে হবে, ডাকের সাজ পড়াতে হবে,মন্ডপ সাজাতে হবে, অনেক কাজবাকি। সবই সেরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে, কারণ সকালেই তো পুজো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাড়াতাড়ি বাড়িতে গিয়ে নাকে মুখে কিছু খাবার গুঁজে, বাইরে রাত কাটানোর অনুমতি আদায় করে ছুটে এসেছেন পূজামণ্ডপে। তিন-চার জন বন্ধু মিলে শুরু হলো কাজ। প্রায় মাঝরাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে আসতে বন্ধুরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে একা পাহারায় বসিয়ে বাড়ি চলে গেলে। নিঃশব্দ নিবিড় সেই রাতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাকী বসে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। আর তার সামনে একটি মাটির প্রতিমা মূর্তি ছাড়া আর কিছু ছিলনা। সেরাতে দীর্ঘসময় প্রতিমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ একসময় তার সর্বাঙ্গে অদ্ভুত অবর্ণনীয় একটা রোমাঞ্চকর শিহরণ খেলে গেল। তার মনে হলো, অপূর্ব সুন্দর মুখশ্রীর প্রতিমা যেন এক নারী,...

ফাটাকেষ্ট কালীপুজো : অবিশ্বাস্য জীবন কাহিনী / Fatakesto Kali Puja ; Incredible life Story

Image
ফাটাকেষ্ট ওরফে কৃষ্ণচন্দ্র দত্তের জীবন মারকাটারি বলিউড সিনেমার চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। তাঁর উত্থানের পিছনে যেমন ছিল কালীভক্তি, তেমনই ছিল রক্তক্ষয়ী লড়াই এবং তাঁর অবিশ্বাস্য সাহস, যার দরুন স্থানীয় এক মস্তান থেকে 'ফাটাকেষ্ট' নামে কলকাতার শহরের বুকে একটা অবিশ্বাস্য মিথ তৈরি হয়েছিল। কলেজ স্ট্রিটে তাঁর বাবার দোকান ছিল। পানের দোকান। সেখানেই সাধারণভাবে তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল। সে সময় তার একমাত্র নেশা ছিল শরীরচর্চা। ছোটখাটো চেহারা সত্বেও তিনি সুঠামো দেহের অধিকারী ছিলেন। নিয়মিত মনোহর আইচের আখড়ায় যেতেন, ডাম্বেল ভাঁজতেন, বাজার থেকে পাঁঠার গুড়দা কিনে নিয়ে আসতেন, সেদ্ধ করে তা তিনি খেতেন, দুধের মধ্যে কাঁচা ডিম গুলে তা তিনি চুমুক দিতেন। এভাবেই বানিয়ে ফেলেছিলেন তার শক্তপোক্ত চেহারা। আর এই শারীরিক সক্ষমতাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ষাটের দশকের শেষ দিকে, নকশাল আমলের শুরুতেই, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের লাগোয়া নরসিংহ লেনে, তার ওপর আচমকা চড়াও হয়েছিল পাড়ারই এক মস্তান, নাম নকুল। নকুলের সঙ্গে ছিল বরাহনগরের দুর্ধর্ষ মস্তান নীলু। প্রাণ বাঁচাতে সদ্যযুবক কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত জড়ি...

কিশোর কুমার : রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই / Kishore Kumar : Struggle in Emergency Period

Image
  ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হল। জরুরি অবস্থা জারি করেই ইন্দিরা গান্ধী, দেশের গরিবী হটানোর উদ্দেশ্যে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে ২0 দফা কর্মসূচি দ্রুত ঘোষণা করে দিলেন। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, সেই জরুরীকালীন সময়ে সঞ্জয় গান্ধী ছিলেন প্রশাসনের অন্যতম কর্তাব্যক্তি, সত্যি বলতে অন্যতম সর্বেসর্বা। তিনি চাইছিলেন, বোম্বের শিল্পী-কলাকুশলীরা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে যোগদান করে সরকার প্রস্তাবিত কুড়ি দফা কর্মসূচির প্রতি প্রশংসাশ মূলক সমর্থন করবেন। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে টেলিভিশনে আয়োজিত হয়েছিল একটি অনুষ্ঠান, যার নাম রাখা হয়েছিল “গীত ভরি শাম”। গানের অনুষ্ঠান হলেও আসলে এটা ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ সঞ্জয় গান্ধী মস্তিষ্কপ্রসূত সরকারি প্রচারাভিযান। তা, সঞ্জয় গান্ধীর ভয়ে বোম্বের নামিদামি শিল্পীরা সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। দিলীপ কুমার যেমন সেই অনুষ্ঠানে চার মিনিটের বক্তব্য রেখেছিলেন, তেমনি লতা মঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রফি, মুকেশ, আশা ভোঁসলে আর ডি বর্মন প্রমুখরা সেই অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছিলেন। অবশেষে ডাক পড়লো ভা...